সুস্থ থাকতে গড়ে দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন হলেও আমরা কি তা করি? কারো আবার ঘুমাতে দেরি হয়। কেউবা তাড়াতাড়ি জেগে যান। পর্যাপ্ত ঘুমিয়েও তৃপ্তি নেই অনেকের। অনেকে মনে করেন ঘুম বেশি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঘুমের মধ্যে হাঁটা, ভয়ের স্বপ্ন দেখা, মাঝরাতে জেগে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। মাদকসেবী, ব্যথার রোগী বা শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। ঘুমের সমস্যাও আবার মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস ও রাত্রিকালীন কাজের পেশা ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।
প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গড়ে দৈনিক ১০ থেকে ১১ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। আর টিনেজারদের জন্য সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় ঘন্টা ঘুমানো জরুরি। তবে বাংলাদেশের শহুরে জীবনযাত্রায় ঘুম এমন নিয়মমাফিক হচ্ছে কি-না এবং এর কারণে শিশুরা দুর্বল স্মরণশক্তি ও অমনোযোগিতাসহ অন্য মানসিক সমস্যায় পড়ছে কি-না তা একটি বড় গবেষণার বিষয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভবিষ্যত্ বিশ্বে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘুমের সমস্যা আবির্ভূত হতে যাচ্ছে কি-না, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা বেশ উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতিবছর ২০ মার্চের (দিন ও রাত সমান) আগের শুক্রবার বিশ্ব ঘুম দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৪৫ ভাগ মানুষের ঘুমের সমস্যা তীব্র। তবে ২০১২ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার গবেষণা অনুসারে, আফ্রিকা ও এশিয়ার বাছাইকৃত আট দেশের মধ্যে ঘুমের সমস্যায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। এর মধ্যে নারীরাই বেশি, ৪০ শতাংশ। এছাড়া ২৩ শতাংশেরও বেশি পুরুষের মধ্যে ঘুমজনিত সমস্যা তীব্র। ঐ গবেষণায় ঘুমের সামাজিক কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন, অল্পশিক্ষা, জীবনসঙ্গীর সাথে না থাকা ও ইচ্ছাকৃত নিম্নমানের জীবন-যাপন করা। গবেষণাটি চালানো হয় পঞ্চাশ ও তদোর্ধ্ব নারী-পুরুষের মধ্যে।
সবার জন্য ঘুমের যেসব নিয়ম মানা বাঞ্ছনীয়-
১. রাতে সময় বেঁধে ঘুমান এবং ৪৫ মিনিটের বেশি দিবানিদ্রা এড়িয়ে চলুন
২. হাঁটার জন্যও নির্দিষ্ট সময় রাখুন, ঘুমানোর আগে ছয় ঘন্টার মধ্যে চা, কফি বা সোডা জাতীয় পানীয় এবং চার ঘন্টার মধ্যে ধুমপান করবেন না
৩. বিছানাকে আরামদায়ক রাখুন। বিছানায় টিভি দেখা, রেডিও শোনা, গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত নেয়া বা সমস্যার সমাধান করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. শোবার ঘরে আরামদায়ক তাপমাত্রা ও বাতাস আছে কি-না খেয়াল রাখুন। ঘুমানোর সময় ঘরকে কোলাহল ও আলোমুক্ত রাখুন।
৫. ঘুমানোর সময়সূচি আন্তরিকভাবে পালন করুন। বিছানায় যাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসলে অন্য ঘরে যান এবং তন্দ্রাভাব আসার পর আবার বিছানায় ফিরে আসুন।
৬. নিয়মিত ও সময় বেঁধে ব্যায়াম করুন বা হাঁটুন।